রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:০৯ অপরাহ্ন

২৬ এপ্রিল ঘিরে শঙ্কা: আ. লীগ-বিএনপি ফের মুখোমুখি!

শেখ সাদী খান (প্রিন্ট সংস্করণ) / ৬৯ Time View
Update : রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪

বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে সেখানে আমরা বাধা দিতে পারিনা
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

২৬ এপ্রিল যে সমাবেশ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটা শান্তিপূর্ণ হবে
শামসুজ্জামান দুদু
ভাইস চেয়ারম্যান, বিএনপি

সমাবেশের নামে তারা যেকোনো সন্ত্রাসও করতে পারে
এড. আফজাল হোসেন
সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

আমরা ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করতে চাই
মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
দপ্তর সম্পাদক, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ

গত বছরের ২৮ অক্টোবর সবশেষ ঢাকায় বড় কর্মসূচি পালন করেছিল বিএনপি। ওইদিন রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। সেদিন বিএনপির নজিরবিহীন অরাজকতা এবং জ্বালাও পোড়াওয়ে নিহত হন এক পুলিশ সদস্য। গুরুতর আহত হন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ গণমাধ্যম কর্মীরাও।

আগুন দেয়া ও ভাঙচুর করা হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ বেশকিছু স্থাপনা। এসব ঘটনায় করা মামলায় বিএনপির মহাসচিবসহ শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতাই গ্রেফতার হন। এর মধ্যে গেল ০৭ জানুয়ারি বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে।

সরকার গঠনের তিন মাস পর ফের বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক হারুনুর রশিদসহ সকল বন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ২৬ এপ্রিল সমাবেশ করবে দলটি।

বিএনপির সমাবেশের দিনই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ সে দিন ব্যাপক শোডাউনের পাশাপাশি ব্যাপকহারে জনসমাগম ঘটাতে চায়।

বিএনপির এই সমাবেশ ঘিরে ইতোমধ্যে মানুষের মধ্যে আবার দুঃশ্চিন্তা ও অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি থাকা মানেই আবার দেশে নতুন করে সহিংসতা, জীবনহানি।

আগামী ২৬ এপ্রিল নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের পরিকল্পনা। সরকারকে বিদায়ের হুশিঁয়ারি দিয়ে নেতারা বলছেন, এ দিন আন্দোলনে রাজপথে নেমে আসবে দেশের সাধারণ জনগণ।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতাদেরও পাল্টা হুশিঁয়ারি, বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। একইসঙ্গে ওইদিন রাজধানীতে শান্তি সমাবেশের ইঙ্গিতও দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সোনালী বার্তাকে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও মোকাবেলা করতে যা যা পদক্ষেপ নেয়ার সেটা তারা নেবেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সব সময় তৎপর ও সতর্ক অবস্থানে থাকেন। আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে বলতে পারি বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে সেখানে আমরা বাধা দিতে পারিনা এবং দেব না। আমরা শান্তিপূর্ণ পথে হাটি। উন্নয়ন, অগ্রগতি মানুষের অধিকার এবং তাদের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব সব সময় আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে করে থাকে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। ঐতিহাসিক ভাবেই আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম করে থাকে। সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী গোষ্ঠীর মদদদাতাদের ষড়যন্ত্র যাতে জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সে জন্য দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে জনসম্পৃক্তা বাড়িয়ে আমরা সবাই মিলে উন্নয়ন, শান্তি সমৃদ্ধি এবং সম্প্রীতির বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু সোনালী বার্তাকে বলেন, বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। আগামী ২৬ এপ্রিল শুক্রবার যে সমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছে সেটাও শান্তিপূর্ণভাবেই করবে। তবে আওয়ামী লীগ যদি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির নামে তাদের স্বভাবজাত ভূমিকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিশৃঙ্খলা করার কোনো ধরণের পরিকল্পনা করে থাকে তাহলে বিএনপির জন্য চিন্তার ব্যাপার।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আফজাল হোসেন সোনালী বার্তাকে বলেন, বিএনপি সমাবেশ করতেই পারে, তাতে বাধা নেই। সমাবেশের নামে তারা যেকোনো সন্ত্রাসও করতে পারে। বরাবরই তারা একটা সন্ত্রাসী দল। এটা বিএনপি নেতাদের অভ্যাস। তবে সেটা করলে আইন-শৃংখলা বাহিনী সেই বিষয়টা আইনী প্রক্রিয়ায় দেখবে। আর রাজনৈতিক দল হিসেবে এ দেশের মানুষের প্রতি আওয়ামী লীগের দায়বদ্ধতা আছে, আমরা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক আছি। বিএনপি যতদিন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালাবে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ ততদিন রাজপথে সজাগ থাকবে। আমরা বিএনপির যেকোনো সন্ত্রাস ও সহিংসতা প্রতিহত করবো।

বিএনপির সমাবেশ থেকে কোনো উস্কানি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হলে আওয়ামী লীগ কি প্রস্তুতি নেবে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ সোনালী বার্তাকে বলেন, আমরা আমাদের ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করতে চাই। এটা বিএনপির সাথে রাজনৈতিক কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি কিংবা সমাবেশ নয়। সন্ত্রাসী দলের সাথে কোনো পাল্টাপাল্টা কর্মসূচি দেয়া যায়না। তবে তাদের অতীত ইতিহাসে কখনো ভালো ছিল না। তারা এমন সমাবেশের নামে সাধারণ মানুষের জানমালসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। বাসে আগুন দিয়েছে, পুলিশ হত্যা করেছে, রেলের পাত উপড়ে ফেলেছে, গণমাধ্যম কর্মীদের পিটিয়ে আহত করেছে। এসবের যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, মানুষের যাতে ক্ষতিসাধন না করতে পারে সে জন্য আমরাও কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সামগ্রিকভাবে রাজপথে প্রস্তুত থাকবো। এবং আমাদের শান্তি ও উন্নয়ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পরিচালনা করবো।

সে দিন কত হাজার মানুষের সমাগম ঘটাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ২০-৩০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটানোর চেষ্টা করবো শুধুমাত্র ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পক্ষেই। এবং আগত নেতাকর্মীদের কথা বিবেচনা করে এই গরমে তাদের জন্য সুপেয় পানি ও হালকা খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।

আওয়ামী লীগ মানুষের রাজনীতি করে, দেশের কল্যাণে কাজ করে। কেউ কোনো বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা করার চেষ্টা করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ।

সোনালী বার্তা/এসআর


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর